বিল গেটসকে বাফেট যা বলেছিলেন, বিস্তারিত পড়ুন!
বিল গেটসকে বাফেট যা বলেছিলেন
বিশ্বের জনপ্রিয় এবং নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিদের রয়েছে বর্ণাঢ্য জীবনকাহিনি। সবাই যে খুব ভালো অবস্থান থেকে এসে বিখ্যাত হয়েছেন, এমন নয়। নিজ নিজ যোগ্যতায় বিখ্যাত, প্রভাবশালী হয়ে ওঠার আছে নানা উদাহরণ। তাঁদের জীবনকাহিনি অনুসরণীয়।নিজ গুণে এবং যোগ্যতায় বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি হচ্ছেন ওয়ারেন বাফেট। ১৯৩০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কার ওমাহা এলাকায় জন্ম নেওয়া বিশ্বের অন্যতম সফল এ বিনিয়োগকারী গত বছর একটি দাতব্য সংস্থায় তিন হাজার ১০০ কোটি ডলার দান করেছেন। বিনিয়োগের নেশাটা শুরু হয় ছোটবেলা থেকেই এবং মাত্র ১১ বছর বয়সে প্রথম একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনেন তিনি! শুনতে অবাক লাগলেও মাত্র ১৪ বছর বয়সে সংবাদপত্র বিক্রি করা অর্থ দিয়ে একটি ছোট প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন ওয়ারেন বাফেট!
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কনজিউমার নিউজ অ্যান্ড বিজনেস চ্যানেলে (সিএনবিসি) দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে তরুণদের বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। এ কথাগুলোই তিনি পরে বলেছেন বিল গেটসকে।
নিজের ১১ বছর বয়সে শেয়ার কেনার অভিজ্ঞতার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘যেখানেই কম খরচ দেখবে, সেখানে নিজের সন্তানদের বিনিয়োগে উত্সাহিত করা উচিত।’ কম বয়সে কেনা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তাঁর মতামত, জমা করা ক্ষুদ্র অর্থ দিয়ে সন্তানদের যেকোনো রকমের ব্যবসা শুরু করার ব্যাপারে আগ্রহী করাটা ভালো।
বিয়ের ৫০ বছর পরও তিনি বাস করছেন নিজ শহরে ছোট তিন বেডরুমের একটি বাড়িতে, বাড়িটি দেয়ালঘেরা নয়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যা প্রয়োজন শুধু তাই কেনা উচিত, এ ব্যাপারে সন্তানদেরও উত্সাহিত করা জরুরি।’ শুনতে অবাক হলেও বিশ্বের এ দ্বিতীয় ধনকুবের ব্যক্তিটি নিজেই নিজের গাড়ি চালান এবং নিজের নিরাপত্তার জন্য নেই কোনো নিরাপত্তা কর্মীও! নিজের প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকশেয়ার হ্যাথওয়ে, যার চেয়ারম্যান তিনি। এ প্রতিষ্ঠানের অধীনে সারা বিশ্বে রয়েছে ৬৩টি প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে রয়েছে বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থাও।
কিন্তু কোনো দিনও বিদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বিমান ব্যবহার করেননি ওয়ারেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, সব সময়ই ভাবুন, অর্থনৈতিকভাবে কোন কাজটি সুবিধাজনক। মূল প্রতিষ্ঠানের এতগুলো অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের প্রতিবছর তিনি একটিমাত্র চিঠি দেন! এ ছাড়া তেমন কোনো বৈঠক কিংবা নিয়মিত যোগাযোগও করেন না তিনি।
এ ব্যাপারে মনেপ্রাণে একটি কথা বিশ্বাস করেন এবং বলেন, সঠিক জায়গায় সঠিক লোক নিয়োগ দেওয়া উচিত, যাতে কাজটা হবে—এমন নিশ্চিন্তে থাকা যায়। অধীন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো চিঠিতে দুটি নিয়মের কথা থাকে সব সময়ের জন্য। যার মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে নিজ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার মালিকদের টাকার কোনো ক্ষতি করা যাবে না এবং দ্বিতীয়টি প্রথম নিয়মটি কখনো ভোলা যাবে না! এতে করে শেয়ার মালিকদের বিশ্বাস আর এগিয়ে যাওয়ার পথ সহজ হবে। কাজের সময় বাইরে সমাজের উচ্চপদস্থ মানুষের সঙ্গে মেলামেশায় তেমন অভ্যস্ত নন ওয়ারেন।
কাজের সময় ছাড়া বাকি সময়টুকু ঘরে বসে পপকর্ন খেয়ে আর টিভির সামনে কাটিয়ে দেন তিনি! মজার বিষয় হচ্ছে, নিজে কখনো কোনো মোবাইল ফোন সঙ্গে রাখেন না এবং নিজের ব্যক্তিগত অফিস টেবিলেও নেই কোনো কম্পিউটার!
বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের বিল গেটস একবারই মাত্র দেখা করেছেন ওয়ারেন বাফেটের সঙ্গে। দেখা করার সময় যে খুব উপভোগ্য হবে না, এমনটাই ভেবেছিলেন বিল গেটস। কেননা, দুজনের সাফল্যের পথ আলাদা, জীবন যাপনেই নেই মিল। তাই বিল গেটস ভেবেছিলেন, আধা ঘণ্টাই যথেষ্ট। আধা ঘণ্টার সেই সাক্ষাতের সময় পরে শেষ হয়েছে ১০ ঘণ্টায়। বিল গেটস তো বটেই, তরুণদেরও নানা বিষয়ে পরামর্শ দেন ওয়ারেন বাফেট। এরপর থেকেই বিল গেটস তাঁর দারুণ ভক্ত। একেবারে ডাই হার্ড ফ্যান।
ওয়ারেন তরুণদের ক্রেডিট কার্ড (ব্যাংক ঋণ) ব্যবহারের চেয়ে বিনিয়োগের ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে অর্থ কখনো মানুষ তৈরি করতে পারে না বরং উপার্জন করে নিতে হয়। যতটা সম্ভব সহজভাবে জীবন যাপন করা উচিত এবং কে কোথায় কী বলে, সেটা শুধু শুনে যাও, তবে নিজের যেটা ভালো লাগে, সেটাই করবে।
শুধু ব্র্যান্ড দেখেই পোশাক পছন্দ করতে হবে, এমন যুক্তির পক্ষে নন তিনি। তাঁর মতে, যা নিজের সঙ্গে মানিয়ে যায় এবং আরাম দেয় তা-ই পরবে। সব মিলিয়ে জীবনটা তোমারই, তাহলে কেনই বা অন্য একজনকে সুযোগ দেবে তোমার জীবনের নিয়ম তৈরিতে।
No comments
আপনার মুল্যবান মন্তব্য এখানে লিখতে পারেন। ধন্যবাদ।