বাজে ছেলে!
বাজে ছেলে!
ক্লাস এ ঢুকেই মিথিলার মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। কারন তখনো কেউই এসে পৌঁছায়নি। শুধুমাত্র রাতুল পিছনের টেবিলটাতে একা বসে আছে। এই ছেলেটাকে মিথিলা একদমই পছন্দ করে না। ক্লাসের সবচেয়ে অমনোযোগী , বাজে ছাত্র হিসেবেই রাতুল পরিচিত । আর দেখতেও কেমন জানি অগোছালো। মাথার চুলগুলো উসকো-খুসকো । পরনের কাপড় গুলোও অপরিষ্কার । মিথিলাকে দেখলেই ছেলেটা কেমন জানি হা করে তাকিয়ে থাকে । এই কারনে ছেলেটাকে মিথিলার আরও বেশি অপছন্দ ।
বিকেলবেলা মিথিলা তার বান্ধবী লগ্নের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে জানতে পারলো যে তাদের ক্লাসের রাতুল , সুজয়ের কাছে মার খেয়ে মাথা ফাটিয়ে ফেলেছে।
মিথিলা , সুজয়কে খুব ভাল করেই চেনে । আগে প্রায়ই রাস্তায় মিথিলাকে বিরক্ত করতো ।
বখাটে ছেলেরা তো মারামারি করবেই , এটাই তো স্বাভাবিক । তাই , রাতুলের মাথা ফাটানোর ব্যাপারটা মিথিলার মনে একটুও ছেদ ফেলল না ।
মিথিলা মন খারাপ করে কলেজের বারান্দায় দাড়িয়ে আছে । আজকে ওর পরীক্ষাটা খুবই খারাপ হয়েছে । পাশ করতে পারবে বলে মনে হয় না । এত চিন্তার কারন ছিল না যদি এটা নির্বাচনী পরীক্ষা না হয়ে সাধারণ কোন পরীক্ষা হতো । কিন্তু , নির্বাচনী পরীক্ষায় পাশ না করতে পারলে তো সে এইচ.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারবে না ।
পরের দিন কলেজে গিয়ে মিথিলা খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল । কারন, গত রাতে নাকি শর্ট-সার্কিট এ আগুন লেগে ওদের পরীক্ষার খাতা পুড়ে গেছে । তাই গতদিনের পরীক্ষাটা আবার অনুষ্ঠিত হবে ।
এইচ.এস.সি পরীক্ষা শেষ হওয়ার কিছুদিন পরেই মিথিলার ক্যান্সার ধরা পড়ল । ধীরে ধীরে রোগটা সারা দেহে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করল । কিন্তু , অপারেশন করতে যে পরিমাণ টাকা দরকার তা জোগাড় করাটা মিথিলার পরিবারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিলো না । শেষ পর্যন্ত ধার-দেনা করে বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা সংগ্রহ করে অপারেশন করা হল ।
আল্লাহের রহমতে এবং সবার দোয়ায় মিথিলা সুস্থ হয়ে উঠলো । সুস্থ হওয়ার কিছুদিন পরে মিথিলার কাছে একটা চিঠি আসে । চিঠিটা ছিল এইরকম :
প্রিয় মিথিলা, কলেজে যে দিন তোমাকে প্রথম দেখেছি সে দিন থেকেই তোমাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি । কিন্তু, একটা বখাটে ছেলের ভালবাসাকে তুমি কোনদিনই মেনে নেবে না । তাই , ভেবেছিলাম লুকিয়ে যতটা ভালবাসা যায় ততটাই ভালবাসবো ।
সুজয় যে দিন লোক ভাড়া করে এনেছিল তোমাকে কিডন্যাপ করার জন্য , সে দিন ওদের সাথে মারামারি করেছিলাম শুধু তোমাকে বাঁচাবো বলে।
লগ্নের কাছে জানতে পেরেছিলাম, তোমার নির্বাচনী পরীক্ষায় রসায়ন পরীক্ষাটা খুব খারাপ হয়েছিল । তাই, সে দিন রাতেই কলেজের অফিসে তালা ভেঙ্গে ঢুকে খাতা পুড়িয়ে দিয়েছিলাম শুধু তোমার মুখে একটু হাসি দেখব বলে। কিন্তু , দারোয়ানের কাছে ধরা পরে গিয়ে ছয় মাসের জেল হল। কলেজেরই ছাত্র কাজটা করেছে বলে ব্যাপারটা শর্ট-সার্কিট এ আগুন লেগেছে বলে চালিয়ে দেয়া হল। তাই আর এইচ.এস.সি পরীক্ষাটা দেয়া হল না।
জেল থেকে বের হয়ে শুনলাম, তুমি ক্যান্সার এ আক্রান্ত। টাকার অভাবে তোমার অপারেশন হচ্ছেনা জেনে কোন উপায় না দেখে নিজের কিডনি বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করলাম শুধু তোমায় ভালবাসি বলে ।
আজ আমি জীবনের শেষ পর্যায় এ এসে উপস্থিত হয়েছি । আমার অবশিষ্ট কিডনিটা অনেক আগে থেকেই নষ্ট ছিল ।এখন অবস্থা দিনে দিনে আরও খারাপ হচ্ছে । ডাক্তার বলেছে, আর খুব বেশি দিন বাঁচবো না । তাই মারা যাওয়ার আগে ভাবলাম ,সেই কথাটা বলে যাই । যে কথাটা আজো তোমায় বলতে পারিনি ।
আমি তোমাকে ভালবাসি মিথিলা । অনেক ভালবাসি । ভাল থেকো ।
ইতি, তোমাদের ক্লাসের সবচেয়ে বাজে ছেলে রাতুল
মিথিলার চোখ দিয়ে পানি পড়তে পড়তে চিঠিটা ভিজে গেল….
No comments
আপনার মুল্যবান মন্তব্য এখানে লিখতে পারেন। ধন্যবাদ।