অভিমানী!


বিয়ের অনুষ্ঠানে এক একা বসে আছে লিমা। প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে সে। বিরক্ত লাগছে তার অনেক বেশি। আগেই জানতো এখানে এসে একা থাকতে হবে, তাই আসতেই চায়নি সে। কিন্তু মায়ের পিড়াপীড়িতে আসতে বাধ্য হয়েছে। কোন কাজ না পেয়ে ফেসবুকে লগইন করলো। করেই দেখে অনলাইনে রাকিব, লিমার বয়ফ্রেন্ড !

– কি করো, জান ? ( লিমাকে অনলাইনে দেখামাত্রই রাকিবের মেসেজ ) – কিছু না। মেজাজ খারাপ এখন। – হইছে টা কি ? – কথা বলবা না। – ওকে। – ওকে মানে কি ? – তুমিই তো বললা কথা বলতে না। – তাই বলে আমার সাথে কথা বলবা না ? – আরেহ আশ্চর্য তুমিই তো বললা ! – ও বুঝছি তুমি তো এখন মেয়েদের সাথে চ্যাটিং-এ ব্যস্ত। করো করো যত ইচ্ছা চ্যাট করো। – আজব তো। হু করতেছি আমি চ্যাট। তোমার কি তাতে ? – কি ?????????? – জানো আমি এখন ১০ জন মেয়ের সাথে চ্যাট করতেছি !

প্রচন্ড রাগে ফেসবুক থেকে বের হয়ে যায় লিমা ! ইচ্ছা করেই রাকিব কাজটা করে। লিমাকে রাগিয়ে দেয় সে। আর লিমাও একটু আহ্লাদী মেয়ে, মন মত কিছু না হলেও হয়েছে, প্রচন্ড রেগে যায় সে। বরাবরের মতই এখন রাগে ফুঁসছে সে। ফর্সা, গোলগাল চেহারাটা রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে। একটু পরেই আবার ফেসবুকে গেলো। গিয়ে নিজের আইডি থেকে লগআউট করে রাকিবের আইডিতে গেলো।

গিয়ে দেখে কিসের কি ! সে বাদে সর্বশেষ মেসেজিং করেছে তার বন্ধুদের সাথে। কোন মেয়ের সাথেই তার চ্যাটিং হয়নি। তারমানে মিথ্যা বলেছে সে ! আরেকদফা রেগে গেলো লিমা।

আবার নিজের আইডিতে গিয়ে রাকিবকে মেসেজ দিলো, " আমার সাথে মিথ্যা কথা বললা কেন ? "

– তারমানে তুমি আমার আইডিতে লগইন করেছিলে ? ছি ছি ! না বলে অন্যের আইডিতে যাও, লজ্জা নাই তোমার ?

– কি ???????????? – এত কি কি করো কেন ? – তোমার সাথে কথা নাই। – আরেহ আজব !

রিপ্লাই দেয় না লিমা। রেগে মেগে ফেসবুক থেকে বের হয়ে গেছে সে। একটু পরে আবার লগইন করে দেখে একটা লাভ স্টোরি দিয়েছে রাকিব, নায়ক যথারীতি আর্মি অফিসার !

– আচ্ছা তুমি এত আর্মি আর্মি করো কেন গল্পে ? – এনি প্রব্লেম ? – মানে কি ? – মানে হচ্ছে আমার গল্পের প্লটের সাথে আর্মি অফিসারেরা বেশি খাপ খায়, তাই ওভাবে দেই। আমি ওভাবে কল্পনা করে লিখতে পছন্দ করি।

– না তুমি এভাবে বলো নাই ! – মানে ? – তুমি প্রথমে অন্যভাবে বলেছ। – আরেহ আজব। – কি আজব ? – তুমি ! নারায়ণগঞ্জের মেয়ে তো, একটু বেশি সন্দেহপ্রবণ ! সবসময় একটু বেশি বুঝে !

– তোমার সাথে কথা নাই। – উফফ !! কিছু হইলেই খালি কথা নাই, কথা নাই বলে গান শুরু করে দিবে মেয়েটা ! – তুমি মুড়ি খাও। – তুমি বিয়েতে গেছো না ? – হুম। – তাইলে তুমি ভালো করে মোরগ-পোলাও খাও ! তাইলে যদি মাথায় একটু বুদ্ধি হয় !

মেসেজ দেখে আবার রেগে গেলো লিমা। এবার আর কথাই নাই। সোজা আইডি ডি-অ্যাক্টিভ করে বের হয়ে গেলো।

পরদিন বিকালে পার্কে বসে আছে রাকিব। গতরাতে লিমাকে প্রচন্ড রাগিয়ে দিয়েছে সে ! যে কারণে মেয়েটা প্রথম প্রথম তার ফোনও ধরনি।

মোবাইলের মেসেজে অনবরত সরি বলার বলার পরে একবার ফোন ধরেছিল। ফোনেও অনেকবার সরি বলেছে, লিমা কোন কথা বলেনি। তাই তাকে বিকালে এখানে আসতে বলেছে। যতই কথা না বলুক রাকিব জানে লিমা না এসে পারবে না।

যথা সময়েই লিমা এসে হাজির। রাকিবকে দেখেই, " তোমার সাথে কোন কথা নাই। "

মুচকি হাসে রাকিব। রাগলে লিমাকে দেখতে বেশি সুন্দর লাগে। তাই ইচ্ছা করেই সে তাকে রাগায়। আর সে ভালো করেই।জানে লিমার রাগ কি করে ভাঙ্গাতে হয় !

পকেট থেকে কিটক্যাটের একটা বড় প্যাকেট বের করে বললো, " ভেবেছিলাম তোমাকে দিবো কিন্তু এখন এটা দেওয়ার জন্য মনে হয় অন্য একজন মেয়ে খুঁজতে হবে !

" কি ? " চোখে পাকিয়ে বলে লিমা। " এটা আমার জন্য আনোনি ? " – এনেছিলাম তোমার জন্যই। কিন্তু তুমি তো নিতে চাও না … – ফাজিল।

আর রাগ ধরে রাখতে পারলো না লিমা। হেসে ফেললো সে। তার মধ্যে এখনো বাচ্চাদের মত চকলেটপ্রীতি কাজ করে। আর সেটা জানে রাকিব। লিমার রাগ ভাঙ্গাতে সে তাই চকলেটের ব্যবহারই করে !

এভাবেই তাদের খুনসুটির সমাপ্তি ঘটে যেটা গত দুই বছর ধরে প্রতিনিয়ত চলে আসছে !

পার্কে বসে রাকিবের কাঁধে মাথা রেখে চকলেট খাচ্ছে লিমা !

আর দুজনে নীরবে উপভোগ করছে পড়ন্ত বিকেলের আশ্চর্য সুন্দর, মায়াবী পরিবেশটা !

দুজন প্রেমিক-প্রেমিকার এ দৃশ্যটা আশ্চর্য সুন্দর, সমস্ত সৌন্দর্যকে যেন হার মানিয়ে যায় ! অসাধারণ সুন্দর আর মায়াবী পড়ন্ত বিকেলও এ দৃশ্য দেখে যেন হিংসায় মরে যায় !

No comments

আপনার মুল্যবান মন্তব্য এখানে লিখতে পারেন। ধন্যবাদ।

Theme images by Storman. Powered by Blogger.