কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ



হেমন্তের পরেই আসে শিশির ভেজা হাঁড় কাপানো  শীতকাল। শীত মানেই সকালবেলা খেজুরের রস। শীত মানেই ধোয়া ওঠা ভাপা পিঠার গরম ভাব। শীত মানেই নানা ধরনের পিঠা পুলির উৎসব। শীতকালে মানুষ পিঠা পুলির উৎসবে মেতে উঠেনা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। শীতে গরম গরম পিঠা, শীতে উষ্ণ হাওয়া নিতে কার না ভালো লাগে।

কিন্তু কথায় আছে, ‘কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ।’ শীত কারো জন্য আশির্বাদ আবার কারো জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। যারা ধনী তাদের কাছে এই শীত উৎসবমুখর হলেও দরিদ্রদের কাছে শীত কাল সাপের মত। ধনী লোকেরা শীতে নানা উৎসবে আমেজে মেতে উঠে, এদিকে দরিদ্ররা একটি গরম কাপড় পায়না শীত নিবারনের জন্য। অনেকে আবার এই শীতে সারারাত না ঘুমিয়ে আগুন জ্বালিয়ে আগুনের সামনে বসে থাকে।

শীতে যারা কষ্টে ভোগে অধিকাংশই আমাদের দেশের কৃষক। যাদের আমরা এদেশের প্রাণ বলে থাকি। তারা তাদের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় জীবন ধারণ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। গরীবদের দুর্দশা রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেনের ভাষায়, ‘রোদে পুড়ে খাইটা মরিরে ভাই পাছায় জোটেনা ত্যানা, বৌয়ের পৈছা বিকায় তবু ছৈলা পায়না দানা।’



আমাদের দেশে এ কষ্টটা বেশি ভোগে কৃষকেরা। কবির ভাষায়, ‘এ কঠোর মহিতে, চাষারা এসেছে শুধু সহিতে, মর্মের ব্যথা মর্মে লুকায়ে, কঠোর অনলে দহিতে।’ এছাড়াও যারা রেল লাইনের বস্তিগুলোতে বসবাস করে তাদের অবস্থা তো আরো দুর্বিসহ। তাদের শীত আনন্দ তো দুরের কথা শীতের একটি কাপড় পর্যন্ত জোটেনা।

এছাড়াও শীতে বেশি দুর্দশায় পড়ে উত্তর জনপদের মানুষেরা। বিশেষ করে হিমালয় কন্যা খ্যাত পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার মানুষেরা এই শীতে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে।

২০১৮ সালে তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যা ছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা গত ৫০ বছরে দেশের ইতিহাসে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ বছর তেঁতুলিয়ায় ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যা ডিসেম্বরের শেষে আরও কমতে পারে।



শীতকাল বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সারমিন সাথী জানান, ‘শীত আসলেই গরম গরম ভাপা পিঠা, খেজুরের রশ খেতে ভালোই লাগে।শীতের সকালের রোদ যেন অন্যরকম আরেক স্বাদের নাম।’

একই বিভাগের শিক্ষার্থী নিলয় তানজিম জানান, ‘শীত আসলেই আনন্দদায়ক হলেও সবার জন্য আনন্দদায়ক নয়। শীতে আমাদের দরিদ্রদের পাশে থাকা উচিৎ।’

No comments

আপনার মুল্যবান মন্তব্য এখানে লিখতে পারেন। ধন্যবাদ।

Theme images by Storman. Powered by Blogger.