একটি ফ্রেমের কিংবা প্রেমের গল্প!



একটি ফ্রেমের কিংবা প্রেমের গল্প!

সুস্মিতা অপটিকস। তিন রাস্তার মোড়। আমি দাঁড়িয়েছি একজনকে দেখার অপেক্ষায়। মোট আট চোখের তিনজন মেয়েকে প্রবেশ করতে দেখলাম চশমার দোকানে।

—মুহিন, ওই যে জয়িতা এসে গেছে।

সাজ্জাদ ভাইয়ের সংকেত পেয়ে আমিও গেলাম সেখানে। তিনজনের একজন চারচোখা, মানে চশমা চোখে। আজকালকার প্রজন্মের ভাষায় চশমিস।

যাক চশমিস মেয়েটি আর বিক্রেতার কথোপকথন শুরু হয়ে গেছে এতক্ষণে।

—আমার অর্ডার করা ফ্রেমটা এসেছে?

—জি আপু, এই যে, ৭০০ টাকা দিতে হবে, দাম বেড়ে গেছে।

—আপনাদের এই এক সমস্যা, প্রয়োজন বুঝে গেলে দামটা

বাড়িয়ে দেন। এটা তো ৪০০ টাকার জিনিস, দিলে দেন না হয় রেখে দেন। সামনের দোকান থেকে নিয়ে নিব।

—সামনের দোকানে তো দূরের কথা, এই এলাকায় পাবেন না। আপনি বলেছেন বলে আমি আনিয়েছি, এটা আপনাকে নিতে হবে।

—সামনের দোকানে পাব আর এই দামে আমি নিব না। আমার কাজ শেষ, মানে যে কাজে এসেছিলাম সেটা। দোকানিকে হতাশ দেখাচ্ছে, চশমাটি বিক্রি করতে না পারায়। মেয়েটির পছন্দ আছে। ফ্রেমটি আমারও ভালো লেগেছে। নিয়ে নিব এটা।

—ভাই, মেয়েটি কি আপনার নিয়মিত ক্রেতা?

—জি ভাই।

—আমাকে দিয়ে দেন চশমাটি।

টাকা দিয়ে বেরিয়ে যাব এমন সময় আবারও মেয়েটি হাজির। অনেক খুঁজেও নাকি পায়নি। তাই এই চশমাটিই নিতে এসেছে।

দোকানি আমাকে দেখিয়ে বলে দিল—

—উনি নিয়ে নিয়েছেন।

—ভাইয়া, এটা কি আমাকে দিয়ে দেওয়া যায় না?

—না আপু, এটা আমার বউয়ের জন্য নিয়েছি। ওর অনেক পছন্দ হয়েছে।

মন খারাপ করে ফিরে গেল মেয়েটি। সাজ্জাদ ভাইকে বললাম

পরের পরিকল্পনা ঠিক করার জন্য।

জয়িতাদের বাসায় বসে আছি আমরা। জয়িতার ছোট এক বোন

হুট করে এসে আমার ফটো তুলে নিয়ে গেল। সেই ফটো দেখে জয়িতার চেঁচামেচি কিছুটা আমার কানে এল। কারণ, চেঁচামেচিটা যথেষ্ঠ উচ্চ স্বরেই ছিল। উচ্চ স্বরে চেঁচামেচি করাটা স্বাভাবিক!

কারণ, তাকে আংটি পরাতে আসা ছেলেটির আরেকটি বউ আছে! সে বউয়ের জন্য জয়িতার সামনে ছেলেটি সেদিন চশমা কিনেছে! জয়িতা রাগের চোটে আসবেই না আমাদের সামনে। উপায় না দেখে আমি সেদিন কেনা চশমার প্যাকেটটা পাঠালাম তাঁর কাছে, সঙ্গে একটা চিরকুট।

প্রিয়,

চশমাটি আমার হবু বউয়ের জন্য তাঁর পছন্দে কিনেছি, আর বউটার নাম ‘জয়িতা’। তাড়াতাড়ি এটা চোখে দিয়ে সামনে আসো। না হলে সত্যি সত্যি অন্য কাউকে দিয়ে আসব।

মুহিন।

একটু পর জয়িতা ঘোমটা টেনে সামনে এল। কালকে প্রথম দেখাতেই তার প্রেমে পড়ে গেছি আমি। আজ ওকে আরও বেশি সুন্দর লাগছে। চশমার দোকানে ছোট একটা নাটক ওর সঙ্গে হয়তো না করলেও হতো।

আংটি বদল হয়ে গেল। কদিন পর বিয়েটাও।

বিয়ের পর জয়িতার চশমার ফ্রেম অনেকবারই বদলেছি। তবে সেই ফ্রেমটি তুলে রেখেছি সযত্নে। সেখানে যে খোদাই করা

আছে একটি ফ্রেমের নামে একটি প্রেমের গল্প!

No comments

আপনার মুল্যবান মন্তব্য এখানে লিখতে পারেন। ধন্যবাদ।

Theme images by Storman. Powered by Blogger.