অসমাপ্ত ভালোবাসা



ভালোবাসি বললেই ভালোবাসা হয়ে যায় না। ৫ বছরের সম্পর্ক আমাদের, ভালোবাসি ভালোবাসি বলে পাগল করে তুলি, নিজেও পাগল হই। তার মানেই কি খুব ভালোবাসি!

পার্কের বেঞ্চে বসে বাদাম খাচ্ছি, রাস্তার মামার দোকানে ফুচকা খাচ্ছি, তার খবর নিচ্ছি খাইছ কি না, ঘুমাইছ কি না, রাতে প্রিয় নামটিতে ডেকে উমম দিয়ে বলছি ঘুমাও সোনা। এর মানে কি আসলেই তার প্রতি খুব ভালোবাসা আছে আমার!
খুব সহজেই বলছি তোমাকে ছাড়া বাচব না। এর মানে কি আসলেই তাকে ছাড়া মরে যাবো!

সে যাওয়ার পর দিব্বি বেচে থাকি, অন্য একটা মানুষকে নিয়ে সুখে থাকি। মনকে বলি, ভালোবাসা মানে দুজনে ভালো থাকার আয়োজন করা, সেই আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু আসলে সেই আয়োজনেও কি সুখ আদৌ ধরা দেয়!

দশ বছরের সম্পর্কের ব্রেকাপ হয়, দীর্ঘ প্রেমের জিবনকে বিয়েতে রুপান্তরিত করার পরেও বিচ্ছেদ হয়। আর একজনের সাথে নতুন করে আবারো আয়োজন করে নতুন সংসার পাতা হয়। সেখানেও কি সুখ মেলে!
হয়তো মেলে আবার হয়তো না!

আসলে বড়ো ব্যাপারটা হলো আমরা বেশিরভাগ সময় ই ভালোবাসা আর সংগ কে উপভোগ করা এই দুইয়ের পার্থক্য বুঝিনা। রাস্তার পাশে বসে ফুচকা খেতে ভালো লাগলেই সেটা ভালোবাসা না, ফুচকা খাওয়ার সময় মেয়েটির ঝালে চোখে পানি চলে আসলে তার ঝালের কষ্টটাও যদি ফিল করতে পারেন সেটার নাম ভালোবাসা। 

বেকার ছেলেটির ফুচকার বিল মেটানোর পর আপনাকে রিক্সায় চড়ার বায়না করলেও যদি আপনার ফিল হয় ওর মাসের খরচের টাকা হিসাবের, ওর কষ্ট হবে পরে চলতে। যদি আপনি চোখ রাঙ্গিয়ে বলেন রিক্সায় উঠবনা আমার হাটতে ইচ্ছা করছে, সেটার নাম ভালোবাসা।

নিঃস্বঙ্গ সময়ে হঠাৎ কেও জিবনে এসে পড়লে সেই সময়, সেই স্বঙ্গ আপনাকে কিছু সময়ের জন্য হয়তো স্বর্গীয় সুখ দিলেই সেটা ভালোবাসা নাও হতে পারে, শুধু সংগটাই ভালো লাগছে সেটাকেই আপনি ভাবছেন ভালোবাসা। 

অন্য বিশেষ কারো সাথে মেশার পরও যদি তার সাথে সেই মানুষটার প্রতি কোন কমপেয়ার আপনার মনে না জন্মায় সেটার নাম ভালোবাসা।
বাসায় এসে প্লেটে খাবার নেওয়ার সময় যদি মনে পড়ে মানুষটা খেয়েছে কি? নাকি রোদে ঘুড়াঘুড়ি করছে?খবর নেওয়ার জন্য ফোনটা হাতে নেই। সেটাকেই টান বলে।

ভালোবাসাটা ফিল করার একটা তৃপ্তিময় সুখ আছে। এই সুখকে ভালোবাসার সুখ বলে। এই সুখ আজন্ম। ঘরে অভাব আসলেও পালায় না। একটা ডিম ভাজিও দুজনে তৃপ্তি করে খেয়ে বুক ভরে শান্তির নিঃশ্বাস নেওয়া যায়। বুক ভরা শান্তি নিয়ে বলা যায় ভালোবাসি।

সংগ ভালো লাগাকে আনন্দ বলে। আনন্দের সময় সীমা কম, আনন্দের ধর্মই ক্ষনস্থায়ী। বিয়ের অনুষ্ঠান বা পার্টি প্রোগ্রামের মত, হই হুল্লোর মজা মাস্তি। পর পর কয়েকদিন এই হই হুল্লোর এ টানা অংশগ্রহন করলে আপনি খুব বিরক্তই হবেন। 

হই হুল্লোর আপনার মাথা ব্যাথার কারন হবে। আনন্দ সবসময়ই তার উৎসগুলোর পরিবর্তন চায়। ভালোবাসার উৎস নির্দিষ্ট, যেমন সন্তানের প্রতি মায়ের আবার ভাইয়ের প্রতি বোনের, কাছের মানুষটার জন্য অপরজনের। সত্যিকারের ভালোবাসাগুলা হারায় না।

যেই মানুষটার সংগ শত অভাবের মধ্যেও ভালো লাগে, যে হাত ধরলে মনে হয় এই হাত ছাড়া আর কিছুই দরকার নেই, যেই মানুষটা পাশে বসে থাকলে মনে হয় আমার আর কোন ভয় নেই, যেই মানুষটার কষ্ট দেখলে বুকের মধ্যে কষ্টের কুন্ডলি সৃষ্টি হয়, যেই মানুষটার সাথে ঝগড়া হলে জগতের কোন আনন্দ মনকে স্পর্শ করেনা সেটাই সত্যিকারের ভালোবাসা যা কোনদিন পালায় না।

কথায় আছে অভাব আসলে ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায়। আমি এই কথার সাথে একমত না।
অভাব আসলে ভালোবাসা কখনোই জানালা দিয়ে পালায় না, আনন্দ পালায়। আর ভালোবাসা থাকলে অভাব পালায়।

জর্জ হেইড বলেছেন, গভীর ভালোবাসার কোনো ছিদ্রপথ নেই।
যার ছিদ্রপথ নেই তা আবার জানালা দিয়ে কিভাবে পালায়। ভালোবাসা হলো মায়ার সুখ। আর মায়ার সুখ আজন্ম বলেই তার বের হওয়ার কোন ছিদ্রপথ নেই। 

একমাত্র সুখের উৎসটা হারানোই হলো সুখটাকে হারানো। ব্যাপারটা হুমায়ুন আহমেদ এর এই উক্তিটার মতো, তুমি যার প্রেমে পড়বে সে তোমার জগতের একটা বিরাট অংশ দখল করে নেবে। যদি কোনো কারণে সে তোমাকে ছেড়ে চলে যায় তবে সে তোমার জগতের ঐ বিরাট অংশটাও নিয়ে যাবে। তুমি হয়ে পড়বে শূন্য জগতের বাসিন্দা।

No comments

আপনার মুল্যবান মন্তব্য এখানে লিখতে পারেন। ধন্যবাদ।

Theme images by Storman. Powered by Blogger.